গ্রন্থ আলোচনা
অভিজিৎ উড়ের হাঁড়িশালে, শেষ পাতে...
জ্যো তি র্ম য় সে ন গু প্ত
উড়ে বামুনের হাতের রান্না খুব সুস্বাদু – কথাটা এই অভাজনের মুখের কথা নয়, যিনি একবার চেখেছেন তিনি শেষ পর্যন্ত খেয়ে মায় কলাপাতাটুকুও চাকুম-চুকুম চেটে তবে কোলছাড়া করেছেন। আর অভিজিৎ বামুনের রান্নার খবর আমরা অনেকদিন আগেই পেয়েছি। তবে কিনা উড়ে বামুনের সাধারণ মণ্ডামিঠাইতে মন ধরে না! মণ্ডামিঠাই বাঙালের জিনিস। আর এ-জিনিস যত টকে তত বকে। উড়িষ্যা-বঙ্গদেশ নানা রঙ্গে ভরে যখন এই অসম দেশে মিশে ছিল তখন কত পাত যে পড়ত দৈনিক, সে আর কহতব্য নয়। সে প্রসঙ্গ সাময়িক কি চিরকেলে, তা রসিক সর্দারেরা ঘোষণা করবেন। কিন্তু এটা ঠিক, উড়ে বামুনের বিছানো পাতের শেষে না পৌঁছলে ভোজন পূর্ণ বা ভোজনে পুণ্য এক্কেবারে হয় না।
আপাতত এই জানি, শেষ পাতে দই না হলে জমে না। পণ্ডিতজনেরা মিষ্টি দইতে লকডাউন দিলেও টক দইকে লক-আপে পুরতে পারেননি। কিন্তু চতুর্থ বুদ্ধের আপ্যায়িত ভোজসভায় দইয়ের উদয়ন হলো না! নাকি ছাপা ভোজন তালিকা থেকে দইটা উঁইয়ের পেটে চলে গেল! বিশ্বাস হচ্ছে না যে দই নেপোতেই মেরেছে। দই তো ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, হজম শক্তি বাড়ায়, এমনকি হার্ট ভাল রাখার সঙ্গে সঙ্গে বিষণ্ণতা দূর করে চাপমুক্ত করে। তীব্র তামসিক মাছ-মাংসের এঁটোকাঁটাদের পাশে যদি টক দই পড়ল তো মনটা একেবারে সাদা ...... সাত্ত্বিক-সাত্ত্বিক হয়ে যায়। তা নয়, দিল আড়াই গণ্ডা রসগোল্লা!
সে ঠিক আছে – রসগোল্লার ডায়েটারি ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হার্ট ভালো রাখে, কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না – এগুলো সব ঠিক আছে। কিন্তু সে তো গরম অবস্থায়! তন্বী মেয়ের কুরি থেকে বুড়িতে পৌঁছতে কতক্ষণ লাগে, হোক না একটা বছরেরই পুরনো? এতদিনে টকে যাবার সম্ভাবনাটাই বেশি। এমনিতেই তো খাঁটি বাছতে বই উজাড়। তার ওপর সেয়ানা ঠাকুর যদি কলাপাতায় মাছের এঁটোকাঁটার পাশে দিব্য আড়াই গণ্ডা কবুতরের ডিমের মতো রূপবতী রসগোল্লার বাটিটা পাতের সীমান্তে রেখে ঈষৎ টকে যাওয়া মণ্ডামিঠাইগুলো ঠেলে দেন হাতের কাছে, তাহলে আর বলার কিছু থাকে না। তবে কাজের কথা হল, ঘরে-ঘরে পাতের খাবার না খেয়েই হার্ড ইমিউনিটি বাড়ছে, খেলে যে আরও বাড়বে সেদিকে খেয়াল নেই। মওকা বুঝে বিজ্ঞাপনী মশলায় চোবানো তেলেঝোলে ‘সড়া হুয়া’ মৎস্য-মাংসের ছিবড়ে পাতের কোনে রেখে দিবানিদ্রা বা নিশিবাসরে গা এলিয়ে দেবার আগে হজমি গোল্লা যদি পাওয়া যায়, মন্দ কী! অভিজিত ঠাকুরের হাতে হজমি গোল্লা হার্ট-কিডনি-মস্তিষ্কের দুঃখ দূরীকারক জারকরসে চোবানো, বইবেদিক ইমিউনিটি বুস্টার।
জনান্তিকে বলে রাখি, রান্নাটা সে তার বাঁজখাই গলাসমেত ডাকসাইটে ঠাকুমার কাছ থেকেই শিখেছে। সবটাই ঢিমে আঁচে দমে রাঁধা। ঠাকুমার ঝুলিতে তো কম কিছু ছিল না – সেই ঝুলি হারালে অমন সুখের আসরে কি দিবা কি নিশি, বিষাদরসটাকে এসে কাত করে দিয়ে যায়। এপাশ-ওপাশ হতে গিয়ে আবার খুঁচিয়ে খুঁজি আত্মপরিচয় অংশটা। জীবনস্মৃতির সরণি বেয়ে এই প্যান্ডেমিকের কোলে ‘গুডনাইট/সুইট ড্রিমস্’-কে পাশ কাটিয়ে বিনিদ্র রজনী কাটাই নিশিকুটুম্বের পথ চেয়ে – কখন সে আসে আর কখন তার হাতে সাঁড়াশি তুলে দেব যাতে সে বাড়ির একমাত্র জলের পাম্পটা খুলে নিয়ে বিক্রি করতে পারে। বাণিজ্যেই তো মা লক্ষ্মী বাস করেন। হেল্প তো তাকে করাই দরকার – বিশেষত বৎস যখন বলে, ‘চোরটাকে অনেকটা বাবার মতো দেখতে’। ভ্যাবলা মেরে দেখি গ্রামতুতো ভদুদা খোলা সাইকেলটা ব্যাগে পুরে ঠিকঠাক জোড়া লাগানোর জন্য চলে যান শহরে। মেসোটাও হয়েছে এমনি বাংলা প্রিয় যে – কখনও আমার দিবাস্বপ্ন চুরমার করে হাম্বারবে চিকেনপাখিকে ফ্রি টিটেনাস দিতে বলছে, কখনও ২২শে আইন ঝাড়ছে তো কখনও টেকনোস্যাভি হয়ে ‘ক্যাটিস’ বানাচ্ছে। ঠাকুমারই চেনা এইসব গাছগাছড়া থেকে মসলা ঝেড়ে চক্কোত্তি ঠাকুরের হেঁশেল সরগরম।
আমাদের বামুন ঠাকুর কিন্তু দই বা মিস্টির চেয়ে খিচুড়ি-লাবড়াটাই বেশি পছন্দ করেন। তাই বলি, শব্দের চচ্চরিতে নুন-তৈলাক্ত অভিজিৎ ঠাকুরের রান্না শেষ পাতে না পড়ে বরং ইমিউনিটি প্রত্যাশী ‘আম’ পাঠকের প্রথম পাতেই পড়ুক। বাঙাল উইড়্যা আর অহইম্যা ভেদাভেদে ভোগদখল চলুক।
কভারের কলাপাতায় আটকে আছেন? যদি ইমিউনিটি বাড়াতে চান, এক্ষুনি অভিজিৎ চক্কোত্তির সঙ্গে শেষ পাতে বসে যান। প্রথমেই টকে যাওয়া মণ্ডামিঠাই দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। রকমারি পদে ভুরিভোজন হবে। এখনও যদি না বুঝে থাকেন তবে উইপোকা কাটার আগেই একশো টাকা দিয়ে ‘শেষ পাতে’ কিনে বসে পড়ুন।----
No comments:
Post a Comment
Note: only a member of this blog may post a comment.