Thursday 28 April 2011

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষার ভবিষ্যত্

         একটা পরিস্থিতির কথা ভাবা যাক। ধরা যাক, দু-হাজার কুড়ি সাল নাগাদ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে বাংলা ভাষা চিরতরে হারিয়ে গেল। অর্থাত্ এই ভূখণ্ডে একজন বাঙালিও আর রইলেন না। তখন কী হবে ? উদাসীন বলবেন, যা হবার তা হবে। অন্তত 'গেল' 'গেল' এই রবটা আর থাকবে না। যা যাবেই তা কি ধরে রাখবার জিনিস ? অন্যদল বলবেন, এমনটা যে হবে তা অনেকদিন আগেই জানতাম -- ভবিষ্যদ্বাণী তো করেই রেখেছিলাম। তিন নম্বর সম্ভাবনা হল, বরাক বা পশ্চিমবঙ্গের গবেষককুল আকূল হয়ে উঠবেন এর কারণ অনুসন্ধানী গবেষণাপত্র তৈরি করতে। জ্ঞানরাজ্যের ফলন বেশ ভালোই হবে। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো সরগরম হবে। যাঁরা এখনকার ভবিষ্যদ্বক্তা, তাঁদের চাহিদা তখন তুঙ্গে। কারণ তাঁরাই তো এমন একটা পরিস্থিতির প্রধান ব্যাখ্যাতা এবং উপাদান সংগ্রাহকের ভূমিকা গ্রহণ করবেন ! 
        পাঠক ভাবছেন হঠাত্ এমন একটা উদ্ভট প্রসঙ্গের অবতারণা কেন করলাম। করলাম এজন্য যে, বাংলা বিদ্যাচর্চার সঙ্গে জড়িত হবার পর আজ প্রায় কুড়ি বছর ধরে মাঝে-মাঝেই ভাঙা রেকর্ড বাজবার মতো প্রাজ্ঞজনদের মুখে এতদঞ্চলে বাংলা ভাষার স্থিতি সম্পর্কে সংশয়ী কথাবার্তা শুনে আসছি। দেখছি তাত্ক্ষণিক ভাবে ঘোলা জলে সাঁতার কেটে নিতেও কেউ কেউ বেশ উত্সাহী। চূড়ান্ত অজ্ঞতা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে এতটাই নিঃসন্দেহ যে, অহেতুক দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে তাঁদের বাধে না। সুযোগসন্ধানীরা ইত্যবসরে বেনামিতে গায়ের ঝাল মিটিয়ে নেন। অন্তত আঞ্চলিক বাংলা সংবাদপত্রগুলোর চিঠপত্রের ঝাঁপি খুললেই তা বোঝা যায়। এতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষাচর্চার কী উন্নতি হচ্ছে বা বাংলা ভাষা ভবিষ্যতে অন্ধকার থেকে আলোয় আসবে কি না, তা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না। সদর্থক পদক্ষেপের বদলে এই হা-হুতাশ ও নেতিবাচক সমালোচনা বরং সাধারণ পাঠককে বাংলা ভাষাচর্চা সম্বন্ধে অনাগ্রহী করে তোলে -- কোনও জনগোষ্ঠী বা কয়েকজন ব্যক্তি সম্পর্কে জনমানসে বিরূপ অথবা ভ্রান্ত ধারণা গড়ে ওঠাও অসম্ভব কিছু নয়। এই মনোভাব ভাষা, ব্যক্তি বা জাতির উন্নতির সহায়ক হতে পারে না কখনও।
         অথচ দৈনিক সংবাদপত্র বা অন্যান্য সাময়িক পত্রাদিতে আমরা কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে বেশ কিছু সুষম (balanced) লেখা পড়েছি। সেগুলোতে সমস্যার উত্স ও সমাধানসূচক কিছু সম্ভাবনাময় প্রস্তাব সম্পর্কেও জেনেছি। এর মধ্যে নিজেরও কয়েকটা নিবন্ধ রয়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষাচর্চার ইতিবাচক নানা দিকের খবরও সংবাদপত্রে পেয়েছি। সেগুলো কেন যে নেতিবাচক সমালোচকদের চোখ এড়িয়ে যায় তা বুঝি না। তাই না জেনেশুনে কিছু বিরূপ উক্তি বা হা-হুতাশ যখন করতে দেখি তখন লেখাগুলোকে মনে হয় বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অথবা গড্ডলিকাপ্রবাহে ভাসমান প্রলাপ। 'পরিবর্তিত পরিস্থিতি'র বুলি কপচিয়ে লেখকেরা পুরনো সিদ্ধান্ত, ক্লিশে যুক্তিতেই আটকে থাকেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি সত্যিই তাঁরা আগ্রহী হতেন তবে যে লেখাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করলাম, সেগুলো পড়া ছাড়াও বছর পাঁচেক ধরে এই উপত্যকায় বাংলা ভাষাচর্চার ঊর্ধ্বমুখী গতিকে উপলব্ধি করতে পারতেন। বাংলা ভাষা যদি এখান থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার দিকেই পা বাড়িয়ে থাকে, তবে ক্রমাগত বাংলা বই প্রকাশের সংখ্যাটা বাড়ছে কেন? কেন বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে বাংলা সম্প্রচারের সময় বাড়ছে ? কেন বাংলা সংবাদপত্রের সংখ্যাটাও বাড়ছে ? কেনই বা এখানকার সাহিত্যচর্চা ও প্রকাশনা পশ্চিমবঙ্গে স্বীকৃতি পাচ্ছে ? তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষার ভবিষ্যত্ ঘোর অন্ধকারে, তবে বাংলা চর্চার উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলো এখানকার বাঙালিদেরই সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার লড়াই হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত -- যা আর কোনও অঞ্চলের বাঙালি করেনি, করে না, করবেও না। কারণ আর কোনও অঞ্চলের বাংলা ভাষাচর্চা খাদে পড়েছে বলে তো কেউ হা-হুতাশ করছে না। তাহলে আমরা আপাতত একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, এখান থেকে বাংলা ভাষাটা চিরতরে হারিয়ে যাবার আশঙ্কাটা অমূলক। 
         ইতিহাস বলে, এতদঞ্চলে সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাঙালিরা আছেন। যাঁরা আগ্রহী তাঁরা অন্তত শ্রদ্ধেয় সুজিত্ চৌধুরীর এ-সম্পর্কে লেখা প্রবন্ধগুলো একবার পড়ে নিতে পারেন। তবে এটা স্বীকার্য যে, দেশভাগের ফলে ওপার বাংলা থেকে প্রচুর মানুষ ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ বা বরাকভূমির মতো এই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতেও আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন (বরাক উপত্যকায় অনেকের স্থানান্তর না ঘটলেও দেশান্তর হয়ে গেছে), কেউ কেউ চাকরি বদল করেও চলে এসেছিলেন। এছাড়া রেল বা অন্য সরকারি-বেসরকারি চাকরিসূত্রে বহু বাঙালি পশ্চিমবঙ্গ অথবা ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখানে এসেছিলেন -- যাঁদের অনেকেই বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন। এঁদের মধ্যে, বিশেষত পূর্ববঙ্গমূল বাঙালিদের সন্তান-সন্ততিরা এখানকার মাটিতে জন্ম নিলেও পূর্বপুরুষের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিচ্ছিন্নতার মনোভাব কাটাতে পারেননি। অন্তত অনেকের ক্ষেত্রে কথাটি সত্য। অবশ্য এঁদের পরবর্তী বা নবীন প্রজন্ম পূর্বপুরুষবাহিত স্বদেশভাবনাকে আমল দিতে পারেন না। প্রথমত, এই দেশচিন্তা তাঁদের কাছে এক দূরতর ইতিহাস, যে ইতিহাস কখনও পড়বার সুযোগ হয়নি। দ্বিতীয়ত, গতিময় পৃথিবীতে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হবার চিন্তা তাঁদের কাছে পূর্বপুরুষের দেশচিন্তার চেয়ে অনেক বেশি প্রিয়। সুতরাং এঁদের কাছে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষার অস্তিত্ব বিষয়ক কাঁদুনি গেয়ে কোনও লাভ হবে না। বরং এখানে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বাণিজ্যিক লাভালাভের চাবিকাঠি যদি তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া যায় তবে তা তাঁরা লুফে নেবেন। নিচ্ছেনও। মাতৃভাষাটাও যে উপার্জনে সাহায্য করতে পারে সে-কথাটা যখন কর্মশালার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের জানিয়ে দিই তখন তারা উত্সাহিত হয়। আশ্চর্যজনক ভাবে কাঁদুনি গায়কেরা সে খবরে উদাসীন থাকেন। 
          যাঁরা এই নতুন প্রজন্মের নন তাঁদের কাছে দেশ ও ভাষা হারানোর বিষয়টি উপভোগ্য বিশ্রম্ভালাপ। অবশ্য পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই বিশ্রম্ভালাপে মদত দেয়। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। কিন্তু অসম যাঁদের জন্মভূমি তাঁদের তো দেশ হারানোর ব্যথা থাকা উচিত নয়। বহুদিন রাজনৈতিক কারণেই এখানে আত্মীকরণ প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে ছিল বলে তাঁদের মনে জন্ম নিয়েছে নিজভূমে পরবাসীর যন্ত্রণা। আজ যখন চারদিকে উদারীকরণের হাওয়া বইছে তখন আমরাও চাইব ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যাবতীয় সম্পর্কের মধ্যে সেই উদারীকরণের প্রকাশ ঘটুক। তাহলে সেই আত্মীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং নিজভূমে পরবাসীর যন্ত্রণা থেকেও আশা করি মুক্ত হওয়া যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই প্রক্রিয়া দ্বিমুখী -- 'দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে'। যাঁরা মনে করেন এখানে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব বিপন্ন তাঁদেরই তো এই প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া উচিত। ভেবে দেখুন, আজ ওই বিপন্নতার অন্যতম চিহ্ন হিসাবে পাঠ্যবইতে অসমিয়া শব্দ সংমিশ্রণের প্রাবল্যকে তুলে ধরা হচ্ছে -- তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে যে এখানে অসমিয়া ছাত্রদের বাংলা ভাষাতেই পড়াশোনা করতে হয়েছে, সে-কথা মনে আছে তো ? যদিও সেটা ব্রিটিশ নীতির অবদান, তবু সেই যন্ত্রণা কি বাংলা পাঠ্যবইতে অসমিয়া শব্দ সংমিশ্রণের চেয়ে কম ? আমি বলছি না যে, একমাত্র সেজন্যই পাঠ্যবইয়ের ভুলটা যুক্তিযুক্ত। কোনও ভুলই সমর্থনযোগ্য নয়। একটা ভুল দিয়ে অন্য ভুল সংশোধন করাও যায় না। আত্মীকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়াটাও একরকম ভুল। তাই বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধির জন্যই আত্মীকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। 
          আত্মীকরণ মানে কিন্তু আপোস নয়, আত্মবিনষ্টিও নয়। অন্যকে জানার মাধ্যমেই আত্মবিস্তার ঘটে -- বাঙালি এ-ভাবেই জগতের আনন্দযজ্ঞে নিমন্ত্রণ পেয়েছিল। নিজেকে কূপমণ্ডূক করে রেখে নয়। অসম সাহিত্য সভার সাম্প্রতিক ক্রিয়াকর্মের দিকে চোখ রাখতে অনুরোধ করছি। শুভকাজ যত ছোটই হোক, যত ত্রুটিই থাকুক আয়োজনে -- তার প্রভাব ও ব্যাপ্তি সুদূরপ্রসারী। এখানে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাবন্ধিকেরা সাহিত্য সভার কাজকর্মগুলোকে যদি সমর্থন করতে পারেন তবে আখেরে বাংলা ভাষারই লাভ। বলা বাহুল্য, এতে অসমিয়া বা বাঙালি জাতিসত্তার কোনও রকম হানি হচ্ছে না। এছাড়া অসম ও বাংলাকে কেন্দ্রে রেখে সাহিত্য অকাদেমি যে কাজগুলো করছেন সে-সম্পর্কে সদর্থক বিশ্লেষণেও লেখকেরা এগিয়ে আসতে পারেন। গুয়াহাটির 'সাতসরী' সাময়িক পত্রিকাটি অসমিয়া ও বাঙালিদের সম্পর্ক নিয়ে যে দুটি অসাধারণ সংখ্যা করেছিল বা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে অসমিয়া ছাত্র-ছাত্রীরা যে বাংলা সাহিত্য পড়েন (অনেক কলেজে বাংলার অধ্যাপকেরাই সেগুলো পড়ান), সে-সম্পর্কে দু-কলম প্রশংসাসূচক মন্তব্য যদি এই প্রাবন্ধিকেরা লিখতে পারেন তবে আশা করি তাঁদের মনে হবে না যে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষার ভবিষ্যত্ ঘোর অন্ধকারে। 
          প্রসঙ্গত বলি, ভাষাবিলুপ্তির একটী কারণ হিসাবে ভূখণ্ড আর জনগোষ্ঠীর বিচ্ছেদকে আজকাল গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তত্ত্ব হিসাবে একে অস্বীকার করার কোনও সঙ্গত কারণ নেই -- ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা জুড়ে ক্ষেত্র সমীক্ষা করলে হয়তো উপযুক্ত উদাহরণও খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু সার্বিকভাবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এরকমটি ঘটার কোনও সম্ভাবনা এখনও দেখা দেয়নি। অসম ভারতবর্ষের অন্তর্গত একটি রাজ্য, ঠিক যেমন পশ্চিমবঙ্গ। ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিভিন্ন দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অসমের যোগাযোগ রয়েছে (বাংলাদেশের সঙ্গে বরাকভূমির সাংস্কৃতিক যোগাযোগও তো রয়েছে)। এই যোগাযোগ যেদিন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে, একমাত্র সেদিনই অসম তথা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিদের সঙ্গে ভারত ও বহির্ভারতের বাঙালিদের সংযোগসূত্র বিচ্ছিন্ন হবে। আর তখনই তাত্ত্বিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখানে জাতি এবং ভাষার বিলুপ্তি ঘটবে। 
          এবারে দুটি কথা পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে বলব। প্রথমটি বাংলা মাধ্যমের স্কুলে অসমিয়াভাষী শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে। এটা নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল উঠেছে। উপযুক্ত জায়গায় আবেদন, নিবেদন এবং প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মোটকথা এখানকার বাঙালিরা সমস্যাটি সম্পর্কে উদাসীন নন। তবে সমস্ত মহল থেকে প্রচেষ্টার মাত্রাটা বাড়ানো প্রয়োজন। সম্পূর্ণ বিষয়টি শিক্ষা বিভাগের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। হয়তো আমাদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এ-বিষয়ে আমার একটি বিকল্প সিদ্ধান্তের কথা গুয়াহাটির 'সংলাপ'  সাময়িক পত্রিকাটিতে লিখেছিলাম। উত্সাহী পাঠকেরা সেটা পড়ে নিতে পারেন। এখানে শুধু বলে রাখি, এরকম নিয়োগের আগে প্রার্থীর জন্য এক মাস বাংলা ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে আর কারও আপত্তি থাকবে না আশা করি। এরকম আরও কয়েকটি প্রসঙ্গ আছে যা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সম্পর্কে উদগ্রীব করে তোলে এবং যার সমাধান রাজনৈতিক ভাবেই করা সম্ভব। যেমন 'ডি' ভোটার বা হোজাইয়ের দেশবন্ধু বিদ্যাপীঠে শিক্ষক নিযুক্তির অভাবে '২০০৩ সাল থেকে উচ্চতর মাধ্যমিকে বাংলা মাতৃভাষা বিষয়টির পাঠদান বন্ধ' (মাসিক যুগশঙ্খ, এপ্রিল ২০১১) ইত্যাদি প্রসঙ্গ। এগুলো নিশ্চিহ্নায়ণ প্রক্রিয়ায় কিছু পরিমাণে মদত দেয় ঠিকই, তবে এ-পথেই ক্রমে অন্ধকার হবে -- এ-ধরনের সরলীকরণে আমি বিশ্বাসী নই। কারণ অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা এ-ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে নির্ভাবনায় দিন কাটাচ্ছেন এমনটা নয়। 
         তবু বিভিন্ন বিষয়ে উদাসীন থাকা বা ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলা ভাষার মৃত্যুকে ডেকে আনার মতো অভিযোগগুলো ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অবিরাম সম্প্রীতির  সম্পর্ক গড়ে তোলায় সচেষ্ট, নিরলস আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মীকরণের প্রক্রিয়ায় সামিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিদের ওপর এই অভিযোগ দুর্ভাগ্যপূর্ণ ও অনভিপ্রেত। এটা বোঝার ক্ষমতা অভিযোগকারীদের মনে পুনর্জাগরিত হোক -- এই কামনা করি। আমি আগেও বলেছি, যা দূরতর ইতিহাস, সে-সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র চেতনা বর্তমান প্রজন্মের নেই। তবু এখানে নিয়ম করে উনিশে মে বা একুশে ফেব্রয়ারি পালিত হয়। অথচ ভালো করেই জানি, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যাঁরা শহিদ হয়েছেন (সংখ্যাটা এগারোর চেয়ে বেশি হলেও), তাঁদের জন্য উপত্যকার বাইরে বাংলা ভাষার শুভচিন্তকেরা কখনও কোনও সভা আয়োজন করেননি। করে থাকলে আমাকে পরিসংখ্যান জানাবেন, আমি মন্তব্য তুলে নেব। বর্তমান সময়ে বাঙালিরা পরস্পর অসমিয়াতে কথা বলেন -- এই অভিযোগও অবান্তর। অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সাধারণ ভাবেই ইংরেজিতে নয়, অসমিয়াতে কথা বলাই এখানকার রীতি। যস্মিন দেশে যদাচারঃ। এতে বোঝায় না যে এখানকার বাঙালিদের জন্যই বাংলা ভাষার নাভিশ্বাস উঠেছে। 
          কারও কারও মতে এই উপত্যকায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপককুলই ভাষাটির দীন অবস্থার জন্য দায়ী। তাহলে তো এখানকার বাজার অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদির মন্দ অবস্থার জন্য এই বিষয়গুলোর অধ্যাপকেরাই দায়ী হবেন। একটা বিশাল ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের সামান্য কয়েকজন বাংলার শিক্ষক কীভাবে ওই অঞ্চলের বাংলাভাষী মানুষের আদরের ভাষাটির অধঃপতনের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী হন, তা বুঝি না। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যত বাঙালি আছেন সবাই কি ওই শিক্ষকদের ছাত্র-ছাত্রী ? না কি একমাত্র বাংলা নিয়ে বা বাংলা মাধ্যমে যাঁরা পড়াশোনা করেন তাঁরাই বাঙালি ? এটা না হলে তো বাঙালিদের ভবিষ্যত্ বাঙালি অধ্যাপককুল নষ্ট করতে পারেন না। হ্যাঁ, বেনোজল সর্বত্রই আছে -- থাকলেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা শেখানোর আখড়া নয়। মূল শেখাটা ছাত্র-ছাত্রীরা আগের পর্বেই চুকিয়ে আসে। এখানে শুধু কিছু ভুল-ত্রুটি শুধরে দেওয়া যায়। আর দেখানো যায় ভবিষ্যতের পথ। এর চেয়েও বড় প্রশ্ন, বাংলা মাধ্যমে এখন পড়ছে কারা ? মেধাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা খুব কম। মাধ্যমিক পর্যন্ত দশ-বারোটি রবীন্দ্র-কবিতা, নজরুলের তিনটি, মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুটি, সুকান্তের দুটি কবিতা বা বঙ্কিমচন্দ্র- শরত্চন্দ্রের কয়েকটি গল্প-উপন্যাসের অংশ পড়ে বাঙালির উত্তরাধিকার গড়ে ওঠার কথা কল্পনা করা নিতান্ত বাড়াবাড়ি। বাড়িতেই তো চর্চার অভাব। এ-সম্পর্কে অন্যত্র লিখেছি -- তাই অহেতুক বিস্তার করছি না। তবে হ্যাঁ -- বিদ্যায়তনিক বাংলা পঠন-পাঠন হয়তো এখানে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীর অভাব। এখানেও একটি 'যদি' আছে। ভাষাশিক্ষার সঙ্গে উপার্জনের সবল মণি-কাঞ্চন যোগাযোগ ঘটলেই ছাত্রসংখ্যা বাড়বে। আর প্রয়োজন সিলেবাসে যথোপযুক্ত পরিবর্তন। দুটি দিকেই এখানে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাংলা মাধ্যমে পড়েছেন বা পড়েননি -- সমস্ত বাঙালি অভিভাবকের শুভবুদ্ধির ওপর আমাদের নির্ভর করতে হবে। তাহলে বিদ্যাচর্চার দিক থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষা অবলুপ্তির ভয় কিছুটা হলেও কমবে। 
         ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষার স্থিতি সম্পর্কে আমাদের ভাবনাটা তাহলে দাঁড়াবে এই রকম -- পুরনো কাসুন্দি না ঘেঁটে সম্পর্কের নব রসায়নকে আরও নিবিড় করার মানসে আত্মীকরণ প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিলে এবং ন্যায্য দাবিগুলো সার্বিক প্রচেষ্টায় আদায়ের চেষ্টা করলে বাংলা ভাষাও রসাতলে যাবে না।
-------------------       

Monday 11 April 2011

ঘুম আয়না

ঘরের ভেতর খৈতানের একটানা শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। মাঝে-মাঝে ক্যালেন্ডারের ফরফর পাতা ওড়ার আওয়াজ। স্ট্রিট লাইটের আবছা আভাস মশারির ওপর এসে পড়ছে। এখন স্বপ্ন দেখার সময়। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সাইকিয়াট্রিস্টরা রোগীদের বলে দেন রাতের স্বপ্নগুলো লিখে রাখতে। তাহলে না কি রোগ সারানোর সুবিধে হয়। আমার তো রোগ সারাতে স্বপ্ন দেখবার প্রয়োজন হয় না। আমি ভাবি, যদি এমন হয়। যদি এভাবে হয় -- ভাবতে-ভাবতে কোথায় যে চলে যাই! কেন যাই ? তৃপ্তি চাই। বিকেলের মন রাত হলে যেভাবে হাতড়ে বেড়ায় সেভাবে আমার সাথে কথা বলি। কত যে হিজিবিজি আঁক -- ছাই, মাথামুণ্ডু আছে নাকি তার। অন্তত স্বপ্নে মোষের মতো হিংস্র প্রাণী বা সাপ বা অন্য কারো তাড়া খেয়ে ঘেমে-নেয়ে একসা হবার চাইতে তো ভালো !
আমার চারদিকে দেওয়াল। মনের জানালা দিয়ে আলো আসে -- কারা যেন যায় নানা পথ বেয়ে। সেই পথের রেখা,তার দু-ধারের ছবিগুলো মনে ভিড় করে আসে। আমি দেখি, স্বপ্নের ছবি দেখি সেইসব সময়ের। ঘুমের ঘোরে ......
রাত গড়িয়ে এলে বৃষ্টি নামল। প্রথমে অঝোরে তারপর থেমে থেমে একবার বেশি একবার কম। মরশুমের এই প্রথম বৃষ্টিতে কান্না নয় খুশির গান। বর্ষায় একটানা একঘেয়ে টিপটিপ বড় ক্লান্তিকর। তখন চারদিকে জল থইথই। ব্যাঙের ডাক আর কচুরিপানার গা-মোচড়ানো গন্ধ। মনে পড়ে দু-দুটো বন্যার কথা। চারদিকে জল। এখানে তখন বসতি কম। দিনের বেলা দূরের বাড়িগুলোকে দ্বীপের মতো দেখায়। পাশের বাড়ির দেওয়াল দেখে রোজ জল মাপি -- এক বাঁও দো বাঁও করে সে বেড়েই চলে। কোমর জলে হেঁটে হেঁটে অফিসবাবুরা, কাজের মেয়েরা সকালে যায় বিকেলে ফেরে। আর রাতগুলো কাটতেই চায় না। একটানা দশদিন বৃষ্টির পর আর বাড়িতে থাকা গেল না। পুজোর মুখে বেরিয়ে গেলাম এক কাপড়ে। শহরের বন্যা গ্রামের চেয়ে অন্যতর। দুটো লম্বা বাঁশের ওপর কাঠের পাটাতন ফেলে বাড়ির মেয়েদের নিয়ে গেল উদ্ধার করে। আমি বাবাকে বগলদাবা করে -- কখনও বুকজল কখনও গলাজলে ভেসে-ভেসে। সে এক মজার দৃশ্য। তিন-চারদিন পর ফিরে এসে দেখি বেড়া ডিঙিয়ে বাগানে যে কচুরিপানাগুলো ঢুকেছিল তারা সবাই জল না পেয়ে খুব মুষড়ে পড়েছে। প্রথমেই ওদের তুলে সামনের মাঠে জমা জলে ফেলে দিয়ে পুনর্জীবিত করলাম। স্কুটারের গাল বেয়ে কান্না গড়িয়ে পড়ার দাগ তখনও স্পষ্ট। কী করব? বাধ্য হয়েই তো ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। সঙ্গে নেবার উপায় থাকলে নিয়েই যেতাম। এবার ওকে শুইয়ে দিলাম। পেট থেকে প্রচুর জল বেরলো। তবু তার সঙ্গীন অবস্থা। ঠেলায় উঠিয়ে সোজা ডাক্তারের চেম্বার। ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় জ্ঞান ফিরল। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও কিছুক্ষণ। বিকেলের আলো গড়ানোর আগেই বাড়ি ফেরা গেল। এর মধ্যে পেছনের উঠোন এবং কলতলা থেকে কোদাল দিয়ে জমা পলি চেঁছে ফেলা হয়েছে। বালতি বালতি জল গেছে গন্ধ ছাড়াতে। পুজোটা সেবার মনে রাখার মতো করে কেটেছিল।

Saturday 9 April 2011

রাতগুলো

চাতালের ডান কোণ ঘেঁষে তুলসি মঞ্চ। একটা মোম জ্বালানো হয়েছে, মঞ্চের মাটিতে গোঁজা হয়েছে দুটো সুগন্ধি ধূপকাঠি। দীপের বদলে রবিঠাকুরের নায়িকা মোম নিয়ে যখন ওখানে যায় তখন এ-বাড়ি সত্যি উজ্জ্বয়িনীর প্রাসাদ হয়ে ওঠে। মালবিকা, মা, মামনি ..... অনেক নাম তার। এ-সময়ে তার হাতের এক কাপ গরম চা বড় উপাদেয়। গরমটা এখনও ঠিক তেমন পড়েনি তাই। নাহলে চা-টায় ছ্যাঁকা লাগত। একটু ঠাণ্ডা হয়ে আসার প্ল্যান তো ছিলই। কিন্তু হল কই! শিলং থেকে টংলা --- সবই এখন টঙে তোলা। মেয়ের পরীক্ষা, আমার কাজ, সংসারের ব্রেক আপ-ডাউন করতে-করতেই সময় পেরিয়ে যায়। একটুও দম নেবার জো নেই।
চায়ের কাপ হাতে সে পাশে বসল -- গরমের ছুটির দরখাস্ত দেব এবার। ক'দিন থেকে আসব মায়ের কাছে। বিস্কিট আরেকটা দেব? আটটা বাজলেই রাইস-কুকারটা বসিয়ে দিতে হবে। রাতে তোমার জন্য পাতলা মাছের ঝোলটা আছে। দেখি মা-কে একটু ফোন করে।
ওর কথার গ্রাফ আঁকা কারও কম্মো নয়। তবে টেবিলের ওপর সেলটা বেজে ওঠে তখনই। টেলিপ্যাথি।
একপ্রস্থ আদান-প্রদানের পর ফোন যথাস্থানে যায়। বোনটা একা পড়ে আছে সেই কত দূরে! দু-দুটো বাচ্চা নিয়ে হিমসিম। ওর বরের নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে বদলির সম্ভাবনা শিলং বা আন্দামানে। ইস্ যদি কাছাকাছি থাকতাম দুবোনে।
সত্যিই তো। আজকাল কোম্পানিগুলো কেমন যেন। আমাদের সুবিধে অনুযায়ী বদলি করতে একটুও সায় দেয় না। বউ-বাচ্চা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকো। শুধু কাজ করো আর আমায় মুনাফা দাও। কাজের মানুষগুলোর মন থেকে সবুজ-নীল রঙগুলো একেবারে উধাউ করে দেবার নেশায় মত্ত।
বললাম, শিলং হলেই তো ভালো হয়। আমরাও মাঝে-মধ্যে ঘুরে আসতে পারি তাহলে।
--- আগে হোক, তারপর বোলো।
বৃষ্টি আসছে বোধহয়। যে জানালায় দিনের বেলা রোদ খেলা করে, সেখানে এখন বিদ্যুতের ঝিলিক। ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে, সঙ্গে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ। কয়েকটা পাখি ভয় পেয়ে বোধহয় একটু ওড়াউড়ি করে নিল।
তিন্নি ডাকল, মা পড়ার ঘরে জানালাটা বন্ধ করে দাও তো।
--- আসি দাঁড়া। ইস্ কী সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাস! আমি যদি পাখি হতে পারতাম......

Friday 8 April 2011

মাঝের কয়েকটা দিন

এরপর পাখিটার জন্য আমি হাপিত্যেস করে বসে থাকি। একবার এই ঘুলঘুলি তো আর একবার পাশেরটা। কই এল না তো! কাঁচের ওপাশে বসে ডাকল না তো খুট-খুট শব্দে! পাখি তো, হুঁঃ, তার ওড়ার আনন্দে আমাকে ভুলেই গেছে। যারা উড়তে পারে তারা এমন কত প্রতিশ্রুতি ভুলে যায় । এ শুধু আমার হাতে নাড়ু ধরিয়ে দেওয়া। উড়েই খালাস। আর চোখ রাখব না তো ঘুলঘুলিতে। আসুক না আসুক, কিচ্ছুতে তাকাব না ওইদিকে।
ওদিক থেকে চোখ ফেরাতেই অজন্তা জানান দিল সময় হয়েছে ওষুধ নেবার। ভারি সময় জ্ঞান ওর। আমি কখন কি খাব না-খাব, পরব না-পরব, সকালের কাগজটা দেখব কি দেখব না -- এই ব্যাপারগুলো ওর ওপরেই আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। একদিক থেকে ভলোই হয়েছে -- এই অখণ্ড অবসরটাও নিয়মমাফিক কেটে যাচ্ছে। ভালোই লাগছে। অনেকের নেক নজরে থাকলে বেশ আমোদ হয়। যারা ভালো চায় তারা তো দেখাশোনা করেই -- বাকিরাও বাদ যায় না। এই যেমন পাখিটা......
অজন্তার মতো রূপালিও কম যায় না। সেও চোখ রাখছে সর্বক্ষণ। অজন্তা যদি আছে ডানদিকে তো রূপালি বাঁয়ে। রূপালি যদিও বয়সে বড় তবু বয়সটা রূপ দিয়ে বেঁধে রেখেছে। যখনই দেখবে তখনই সে সেজেগুঁজে রয়েছে -- একেবারে ফ্যামিলি সোপের মেয়েদের মতো। চাকচিক্য তার সারা শরীরে। বাড়িতে থাকলেও মাঝেমাঝে মাথায় সাদা টুপি চড়াবে, যেন সাহেবগিন্নি।
ওদিকে অজন্তা ছিল ছিপছিপে। এখন একেবারে গিন্নিবান্নি চেহারা। মুখটা বেশ ভরা-ভরা, মা-দুর্গার মতো। একবার দেখলেই যে-কোন মানুষের ভালো লেগে যাবে। বলতে বাধা নেই, সিলেকশন আমারই। রূপালি অবশ্য নিজেই এসেছে। সে অন্য কাহিনি ... পরে বলা যাবে। এখন এদের সঙ্গ দিয়েই অবসরের অনেকটা কাটে।
অজন্তা বলতেই তিন্নি প্যাকেট ঘেঁটে দুটো ক্যাপসুল আর জল নিয়ে এল। আমাকে ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্বটা তার ওপরেই পড়েছে। ওষুধটা খেতে-খেতে আবার ঘুলঘুলির দিকে চোখ পড়ল। না এখনও আসেনি। ওড়ার আনন্দের কথা কখনও কি জানব! সন্ধে হলে সে তো আর আসবেও না।
এল না। এক চিলতে নীলাভ গান দিনের সুর শেষ করে পর্দা টেনে দিল। নিয়ন বলে দিল, সন্ধে হয়েছে।........

Tuesday 5 April 2011

surur kathaকথন্তর

আমার এখন অনন্ত অবসর। ঘর থেকে বাইরের জন্য মুখিয়ে থাকা ছাড়া আর করবার কিছু নেই। বাইরে অনন্ত সমুদ্র -- আকাশ। অফুরন্ত নীলের খেলা, সবুজের মেলা। পাখিটা বলে গেল -- জেগে থেকো, এ জানালাতেই আবার চোখ রাখব তোমার জন্য।
--আমায় গান শোনাবে?
--সে তো আমাদের পুরনো কাজ -- আমি একটা নতুন কাজ করতে চাই।
আমি ভাবি পাখি আবার কেমন নতুন কাজ করবে! ও বোধহয় আমার ভাবখানা বুঝল। বলল, আমি তোমাকে আমার আনন্দ দেখাব।
পাখির আনন্দ! সেটা আবার কী?
--ওড়ার আনন্দ। সেটাও  জানো না বুঝি!
আমি ভেবে পাই না পাখির ওড়ার আনন্দ আমি দেখব কীভাবে। পাখি একটু মুচকি হেসে উড়ে গেল এক চিলতে নীলে....
তারপর কী হল?........