Saturday 9 April 2011

রাতগুলো

চাতালের ডান কোণ ঘেঁষে তুলসি মঞ্চ। একটা মোম জ্বালানো হয়েছে, মঞ্চের মাটিতে গোঁজা হয়েছে দুটো সুগন্ধি ধূপকাঠি। দীপের বদলে রবিঠাকুরের নায়িকা মোম নিয়ে যখন ওখানে যায় তখন এ-বাড়ি সত্যি উজ্জ্বয়িনীর প্রাসাদ হয়ে ওঠে। মালবিকা, মা, মামনি ..... অনেক নাম তার। এ-সময়ে তার হাতের এক কাপ গরম চা বড় উপাদেয়। গরমটা এখনও ঠিক তেমন পড়েনি তাই। নাহলে চা-টায় ছ্যাঁকা লাগত। একটু ঠাণ্ডা হয়ে আসার প্ল্যান তো ছিলই। কিন্তু হল কই! শিলং থেকে টংলা --- সবই এখন টঙে তোলা। মেয়ের পরীক্ষা, আমার কাজ, সংসারের ব্রেক আপ-ডাউন করতে-করতেই সময় পেরিয়ে যায়। একটুও দম নেবার জো নেই।
চায়ের কাপ হাতে সে পাশে বসল -- গরমের ছুটির দরখাস্ত দেব এবার। ক'দিন থেকে আসব মায়ের কাছে। বিস্কিট আরেকটা দেব? আটটা বাজলেই রাইস-কুকারটা বসিয়ে দিতে হবে। রাতে তোমার জন্য পাতলা মাছের ঝোলটা আছে। দেখি মা-কে একটু ফোন করে।
ওর কথার গ্রাফ আঁকা কারও কম্মো নয়। তবে টেবিলের ওপর সেলটা বেজে ওঠে তখনই। টেলিপ্যাথি।
একপ্রস্থ আদান-প্রদানের পর ফোন যথাস্থানে যায়। বোনটা একা পড়ে আছে সেই কত দূরে! দু-দুটো বাচ্চা নিয়ে হিমসিম। ওর বরের নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে বদলির সম্ভাবনা শিলং বা আন্দামানে। ইস্ যদি কাছাকাছি থাকতাম দুবোনে।
সত্যিই তো। আজকাল কোম্পানিগুলো কেমন যেন। আমাদের সুবিধে অনুযায়ী বদলি করতে একটুও সায় দেয় না। বউ-বাচ্চা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকো। শুধু কাজ করো আর আমায় মুনাফা দাও। কাজের মানুষগুলোর মন থেকে সবুজ-নীল রঙগুলো একেবারে উধাউ করে দেবার নেশায় মত্ত।
বললাম, শিলং হলেই তো ভালো হয়। আমরাও মাঝে-মধ্যে ঘুরে আসতে পারি তাহলে।
--- আগে হোক, তারপর বোলো।
বৃষ্টি আসছে বোধহয়। যে জানালায় দিনের বেলা রোদ খেলা করে, সেখানে এখন বিদ্যুতের ঝিলিক। ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে, সঙ্গে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ। কয়েকটা পাখি ভয় পেয়ে বোধহয় একটু ওড়াউড়ি করে নিল।
তিন্নি ডাকল, মা পড়ার ঘরে জানালাটা বন্ধ করে দাও তো।
--- আসি দাঁড়া। ইস্ কী সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাস! আমি যদি পাখি হতে পারতাম......

1 comment:

  1. এই লেখাটি পড়ে খুবই ভালো লাগল। আপনাকে আবার নিমন্ত্রন রেখে গেলাম কফিহাউসের জন্য। কমিউনিটি ব্লগে আপনি পাঠক পাবেন অনেক বেশী, ফলে লেখার উৎসাহও বেড়ে যাবে অনেকাংশে। শুভেচ্ছা রইল।

    ReplyDelete

Note: only a member of this blog may post a comment.