Monday 11 April 2011

ঘুম আয়না

ঘরের ভেতর খৈতানের একটানা শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। মাঝে-মাঝে ক্যালেন্ডারের ফরফর পাতা ওড়ার আওয়াজ। স্ট্রিট লাইটের আবছা আভাস মশারির ওপর এসে পড়ছে। এখন স্বপ্ন দেখার সময়। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সাইকিয়াট্রিস্টরা রোগীদের বলে দেন রাতের স্বপ্নগুলো লিখে রাখতে। তাহলে না কি রোগ সারানোর সুবিধে হয়। আমার তো রোগ সারাতে স্বপ্ন দেখবার প্রয়োজন হয় না। আমি ভাবি, যদি এমন হয়। যদি এভাবে হয় -- ভাবতে-ভাবতে কোথায় যে চলে যাই! কেন যাই ? তৃপ্তি চাই। বিকেলের মন রাত হলে যেভাবে হাতড়ে বেড়ায় সেভাবে আমার সাথে কথা বলি। কত যে হিজিবিজি আঁক -- ছাই, মাথামুণ্ডু আছে নাকি তার। অন্তত স্বপ্নে মোষের মতো হিংস্র প্রাণী বা সাপ বা অন্য কারো তাড়া খেয়ে ঘেমে-নেয়ে একসা হবার চাইতে তো ভালো !
আমার চারদিকে দেওয়াল। মনের জানালা দিয়ে আলো আসে -- কারা যেন যায় নানা পথ বেয়ে। সেই পথের রেখা,তার দু-ধারের ছবিগুলো মনে ভিড় করে আসে। আমি দেখি, স্বপ্নের ছবি দেখি সেইসব সময়ের। ঘুমের ঘোরে ......
রাত গড়িয়ে এলে বৃষ্টি নামল। প্রথমে অঝোরে তারপর থেমে থেমে একবার বেশি একবার কম। মরশুমের এই প্রথম বৃষ্টিতে কান্না নয় খুশির গান। বর্ষায় একটানা একঘেয়ে টিপটিপ বড় ক্লান্তিকর। তখন চারদিকে জল থইথই। ব্যাঙের ডাক আর কচুরিপানার গা-মোচড়ানো গন্ধ। মনে পড়ে দু-দুটো বন্যার কথা। চারদিকে জল। এখানে তখন বসতি কম। দিনের বেলা দূরের বাড়িগুলোকে দ্বীপের মতো দেখায়। পাশের বাড়ির দেওয়াল দেখে রোজ জল মাপি -- এক বাঁও দো বাঁও করে সে বেড়েই চলে। কোমর জলে হেঁটে হেঁটে অফিসবাবুরা, কাজের মেয়েরা সকালে যায় বিকেলে ফেরে। আর রাতগুলো কাটতেই চায় না। একটানা দশদিন বৃষ্টির পর আর বাড়িতে থাকা গেল না। পুজোর মুখে বেরিয়ে গেলাম এক কাপড়ে। শহরের বন্যা গ্রামের চেয়ে অন্যতর। দুটো লম্বা বাঁশের ওপর কাঠের পাটাতন ফেলে বাড়ির মেয়েদের নিয়ে গেল উদ্ধার করে। আমি বাবাকে বগলদাবা করে -- কখনও বুকজল কখনও গলাজলে ভেসে-ভেসে। সে এক মজার দৃশ্য। তিন-চারদিন পর ফিরে এসে দেখি বেড়া ডিঙিয়ে বাগানে যে কচুরিপানাগুলো ঢুকেছিল তারা সবাই জল না পেয়ে খুব মুষড়ে পড়েছে। প্রথমেই ওদের তুলে সামনের মাঠে জমা জলে ফেলে দিয়ে পুনর্জীবিত করলাম। স্কুটারের গাল বেয়ে কান্না গড়িয়ে পড়ার দাগ তখনও স্পষ্ট। কী করব? বাধ্য হয়েই তো ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। সঙ্গে নেবার উপায় থাকলে নিয়েই যেতাম। এবার ওকে শুইয়ে দিলাম। পেট থেকে প্রচুর জল বেরলো। তবু তার সঙ্গীন অবস্থা। ঠেলায় উঠিয়ে সোজা ডাক্তারের চেম্বার। ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় জ্ঞান ফিরল। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও কিছুক্ষণ। বিকেলের আলো গড়ানোর আগেই বাড়ি ফেরা গেল। এর মধ্যে পেছনের উঠোন এবং কলতলা থেকে কোদাল দিয়ে জমা পলি চেঁছে ফেলা হয়েছে। বালতি বালতি জল গেছে গন্ধ ছাড়াতে। পুজোটা সেবার মনে রাখার মতো করে কেটেছিল।

No comments:

Post a Comment

Note: only a member of this blog may post a comment.